শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নন, শরৎচন্দ্র রেড্ডি আর মনোরঞ্জন রায়ের মধ্যে মিল কোথায়? একজন তেলঙ্গানার বাসিন্দা, ওষুধ কোম্পানির মালিক আর অন্যজন আদতে বাংলার বাসিন্দা, চিটফান্ডের ব্যবসা ছিল। একটা মিল তো আছেই, দুজনেরই মদের ব্যবসা আছে, ওই রেড্ডি সাহেবের বিদেশি দারু যাকে বলে তার লাইসেন্স আছে, বেচেন, তৈরি করেন না। আর মনোরঞ্জন যিনি চিটিংবাজির জন্য জেল খাটছেন তিনি বাংলা মদ তৈরি করে বোতলে পুরে বেচতেন। শরৎচন্দ্র হলেন সেই বিখ্যাত ব্যক্তি, যিনি রাজসাক্ষী হিসাবে তাঁর সাক্ষ্য দিয়েছেন আর সেই বক্তব্যের ভিত্তিতেই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করেছে ইডি। একই মামলায় সত্যেন্দ্র জৈন, মণীশ সিসোদিয়াকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ইডি এই মামলাতেই রাজ্যসভা সদস্য সঞ্জয় সিংকে গ্রেফতার করেছিল, কোনও প্রমাণই হাজির না করতে পারার জন্য জামিন দিতে বাধ্য হয়েছে। এই শরৎচন্দ্র কিন্তু নমস্য ব্যক্তি, মোদিজির সেই দুর্নীতি-বিরোধী স্বচ্ছ ভারতের জন্য লড়ে যাচ্ছেন, কারণ গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর বয়ানই তো আপ-এর প্রত্যেক নেতাদের পর্দাফাঁস করে দিয়েছে।
তো ফার্মা কোম্পানি অরবিন্দ ফার্মার ডিরেক্টর এই সজ্জনকে ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর ইডি গ্রেফতার করে আবগারি কেলেঙ্কারিতে। মেসেজ ছিল লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার, ১৫ নভেম্বর অরবিন্দ ফার্মা ৫ কোটি টাকার ইলেক্টোরাল বন্ড কেনে এবং বিজেপির হাতে তুলে দেয়। সাকুল্যে সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার বন্ড অরবিন্দ ফার্মা থেকে পেয়েছে বিজেপি। ব্যস ওই বেলপাতা প্রণামী জমা দেওয়ার পরেই ২০২৩-এর মে মাসে শরৎবাবু বেল পান। এবং সম্ভবত পূর্বশর্ত অনুযায়ীই পরের মাসেই তিনি রাজসাক্ষী হন। তারপরের ইতিহাস আমরা জানি। তার মানে রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেফতার করা হবে ওই চিটিংবাজ ফেরেব্বাজদের বয়ানের ভিত্তিতে। কিন্তু যদি তা মিডিয়াতে চলে আসে, তারা যদি মুখ খোলে? তার ব্যবস্থাও পাকা, কেনা হয়ে গেছে সব জয়ঢাক, তারা বেজেই চলেছে, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়, জেল কোর্ট কাছারি, চাকরি খোয়ানো ক’জনই বা ঝেলবে বলুন? তো তারই মধ্যে বেয়াড়া লোকজনও তো আছে। কলকাতা টিভি আছে, তার সম্পাদক কৌস্তুভ রায় আছেন। তিনিও তো বলা থামাচ্ছেন না। অফিসে রেড করার পরে চতুর্থ স্তম্ভের ঝাঁজ আরও বেড়েছে। কাজেই এবারে ডাকা হল ওই দ্বিতীয় চিটিংবাজ ফেরেব্বাজটিকে, হাজির করা হলো তাঁর বয়ান, যিনি অভিযুক্ত নন, কনভিকটেড, সাজা পেয়েছেন, দোষী বলে ঘোষণা করা হয়েছে শুধু নয় বিচারকেরা রায় দিতে গিয়ে জানিয়েছেন যে লোকটি আদ্যন্ত চিটিংবাজ। সেই মনোরঞ্জন রায় জানালেন, তাঁর চুরির পয়সা নাকি কৌস্তুভ রায়ের কোম্পানিকে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব ৩৬)
২০১৬-১৭ থেকে মামলা চলছে, হাজার হাজার পাতার ডকুমেন্টস আছে, মামলার রায় আছে, কোথাও একবারও যার নাম নেই, সেই কৌস্তুভ রায়কে টাকা দেওয়ার কথা হঠাৎ ওই ফেরেব্বাজের মনে পড়ে গেল। এবং কী আশ্চর্য তিনি জেল থেকে ই-মেল করলেন, তাতে হিসেবের খাতার কিছু পাতাও দেওয়া হল। মানে জেলে কম্পিউটার নেট কানেকশন কে দিল? ইডির হেফাজতে থাকা হিসেবের খাতার পাতা কে এনে দিল? এক ফেরেব্বাজ থুড়ি সমাজসেবক শরৎচন্দ্র রেড্ডির বয়ানের ভিত্তিতে আপ-এর নেতাদের জেলে পোরা হয়েছে, সেরকমই এক চিটিংবাজের অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা টিভির সম্পাদক জেলে। একটা বাজে থার্ড ক্লাস চিত্রনাট্য রচনার পরে জেলে পোরা হয়েছে কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়কে। তিনি জেলে। কী চাইছেন? মুক্তি? না। তার জন্য তো ওই ঘাড়টা নুইয়ে আরেকজনের নাম বলে দিলেই হয়। সুবিচার চাইছেন। জাস্টিস চাইছেন। হ্যাঁ আমরাও তাই চাইছি, ২৬৪ দিন জেলেই আছেন, বিরোধিতা বন্ধ হয়নি, হবে না। আমরাও সেই জাস্টিসই চাইছি। জাস্টিস ফর কলকাতা টিভি, জাস্টিস ফর কৌস্তুভ রায়।
দেখুন ভিডিও: