কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Vote) আগে পরে হিংসা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্রত্যক্ষ নজরদারিতে সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি জানাল বিজেপির তথ্যানুসন্ধানী দল (Fact Finding Committee)। ওই দলে আরও দাবি, যাবতীয় বিস্ফোরণের ঘটনায় এএনআই (ANI) তদন্ত করতে হবে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের নেতৃত্বাধীন ওই দল সম্প্রতি বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছে রিপোর্ট পেশ করেছে। বুধবার সেই রিপোর্ট প্রকাশে আনা হয়। ওই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে এখন ভয়াবহ সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়ে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর দল, পেটোয়া পুলিশ প্রশাসন এবং সমাজ বিরোধীদের সম্মিলিত উদ্যোগে পঞ্চায়েত ভোটকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে রিপোর্টে অভিযোগ।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একাধিক দল পাঠিয়েছিল রাজ্যে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দল এসেছিল। সেই সব দলেরও সুপারিশ ছিল, ধর্ষণ এবং অন্যান্য ঘটনা সিবিআই তদন্ত করতে হবে। বিস্ফোরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা এনআইএ তদন্ত করতে হবে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার ঘটনা ঘটেছে প্রায় সর্বত্রই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। দুষ্কৃতীরা ষড়যন্ত্র করে নিজেদের জয় নিশ্চিত করেছেন। দেশের সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্ট ভোট সন্ত্রাসের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল। ভোটে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আদালত বারবার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু এরপরও মনোনয়ন পর্ব থেকে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পর্যন্ত রাজ্যের জেলায় জেলায় হিংসা অব্যাহত ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদল তৃণমূল বিরোধীদের বাধা দিয়েছে মনোনয়ন দিতে। যাঁরা বাধা উপেক্ষা করে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রচারে বাধা দিয়েছে। অনেক বিরোধী প্রার্থীর বাড়িতে ঢুকে পরিবার ও সন্তানদের অপহরণের হুমকি দিয়েছে শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। প্রার্থীদের বাড়িতে সাদা থান পাঠিয়েও হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে তথ্যানুসন্ধানী দলের অভিযোগ। এমনকি মহিলারও শাসকদলের সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বহু জায়গায় বি্রোধী প্রার্থী এবং কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, রিপোর্টে এমনও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee | Kolkatat Police | ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের আওতায় আনার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
বিজেপির ওই দলের রিপোর্টে বলা হয়েছ, ভোটের দিন বুথ জ্যাম থেকে শুরু করে ছাপ্পা, রিগিং, ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলা, পুড়িয়ে ফেলা ,সমস্ত কিছুই ঘটেছে পুলিশের সামনে। শাসকদলের হামলায় বিজেপির অনেক কর্মী নিহত হন। এমনকি গণনার দিনও কারচুপি, সন্ত্রাস কোনও কিছুই বাদ দেয়নি তৃণমূল। দলের বক্তব্য উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকায় অত্যাচারিত বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধিরা বিষয় হতবাক হয়ে গিয়েছেন। ভোটের পড়ে বিজেপির জয়ী প্রার্থীদের জোর করে তৃণমূলে নাম লেখানোর পালাও শুরু হয়ে যায়।
রিপোর্ট পেশ করে এদিন দিল্লিতে তথ্যানুসন্ধানী দলের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ (Ravi Shankar Prasad) বলেন, পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলায় আস্থা নেই মানুষের। রাজ্যে মহিলাদের উপর অত্যাচার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বসলেন, অনেক মহিলা আমাদের পায়ে পড়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছেন। এর থেকে বোঝা যায়, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের নেতৃত্বেকী ধরনের সন্ত্রাস চলছে। পুলিশ শাসকের দলদাসের ভূমিকা নিয়েছে।