শ্রেয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: দোরগোড়ায় বাঙালির মহোৎসব দুর্গাপুজো। ইতিমধ্যেই পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। গোটা কলকাতা জুড়ে চলছে যুদ্ধকালীন ততপরতায় কাজ। উত্তর কলকাতার তেলেঙ্গাবাগানে এবারের পুজোর ভাবনা প্রান্তজনের আত্মকথন। সীমান্ত বাংলার লোক জীবন, উৎসবের সুরকে সঙ্গী করে সাবেকি ঐতিহ্যে নতুন আঙ্গিকে সেজে উঠছে তেলেঙ্গাবাগানের পুজো। তাদের প্রতিমা গড়ছেন ভাস্কর প্রদীপ রুদ্র। আবহ সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন পণ্ডিত তন্ময় বোস। আলোক সজ্জায় রয়েছেন দীনেশ পোদ্দার।
এবাবের মণ্ডপ সজ্জায় ফুটে উঠেছে সীমান্তবর্তী মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের গল্প। যে সব প্রান্তিক মানুষ আলোর বৃত্ত থেকে বহু দূরে রয়েছেন, তাঁদের নিত্ত্যদিনের বেঁচে থাকার লড়াই, অদম্য জেদ আর স্বপ্ন উড়ানের গল্পই এবারের তেলেঙ্গাবাগানের ভাবনায় স্থান পেয়েছে। এই জীবন সংগ্রামের জোয়াল স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন মহিলারা। সেই মহিলাদের গল্পই ভাবনার মূল বিষয়। লোকপার্বন টুসু বা তুষুর আঙ্গিকে একটু একটু করে সেজে উঠছে মণ্ডপ।
আরও পড়ুন: গণেশ পুজোর দিন করুন এই কাজগুলি, প্রসন্ন হবেন গণপতি, বাড়বে ধন-সম্পত্তি
মানুষের কল্পনায় যুগ যুগ ধরে সৃষ্টি হয়েছে যে কোনও ধর্মীয় প্রতীক বা মূর্তি। ঠিক যেভাবে পৌরাণিক যুগে মানুষেরই কল্পনায় সৃষ্টি হয়েছিল নানা দেব-দেবীর। তেলেঙ্গাবাগানের পুজোয় এবার প্রাধান্য পেয়েছে রাঢ় বাংলার টুসু পরব। টুসু আনন্দময়ী লক্ষ্মীর রূপ। অঘ্রান মাসের সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত পুরো একমাস জুড়ে চলে টুসু উৎসব। শেষ দিনে টুসু ভাসানের মধ্যে দিয়ে চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে এই উদযাপনের। টুসু যেন মা দুর্গার মতোই রাঢ় বাংলার ঘরের মেয়ে, যার বিসর্জনের সময় সম্মিলিত কণ্ঠের গান শোকের আবহ তৈরি করে। দারিদ্রক্লিষ্ট সীমান্ত বাংলার মেয়েরা পৌষ মাসের এই টুসু পরবের দিকে চেয়ে থাকেন। রাঢ় বাংলার মেয়েরা পৌষ সংক্রান্তিতে ভিড় জমান কংসাবতী ও সুবর্ণরেখার তীরে চৌদল নিয়ে। সেই চৌদল বা চতুর্দোলা তেলেঙ্গাবাগানের মণ্ডপসজ্জার উপকরণ। সীমান্তবাংলার টুসু ব্রত রাখা সেই মেয়েদের দুঃখ দুর্দশার সঙ্গে কলকাতা শহরে বসে থাকা একদল প্রান্তিক শ্রমজীবী মায়ের গল্পও বুনবে এই মণ্ডপ, পেশায় যাঁরা ঠোঙাওয়ালি নামে পরিচিত।
সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর তাঁরা নিজেদের বাকি সময়টা ব্যয় করেন কাগজের ঠোঙা বানানোর কাজে। শহর ও গ্রামের দুই প্রান্তে লড়তে থাকা এই মেয়েদের সেই গল্প একসুতোয় বাঁধবে টুসু গানের সুর আর কথা। টুসু উৎসবের প্রধান উপাদান হল সঙ্গীত। তাতে ফুটে ওঠে নারী জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার কথা।